
আত্মহত্যা শুধু একটি জীবনকে শেষ করে দেয় না, একটি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি পুরো মানব জাতিকে হুমকির ভেতর ফেলে দেয়। জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে আত্মহত্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। দক্ষিণ এশিয়ায় দশম। গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন করে আত্মহত্যা করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহত্যার পেছনে অন্যতম কারণগুলো হলো- মানসিক হতাশা ও বিষণ্ণতা, দাম্পত্যজীবনে কলহ কিংবা যেকোনো সম্পর্কে অনৈক্য, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতা প্রভৃতি।
আত্মহত্যা রোধে ইসলাম কি বলে
ইসলামে আত্মহত্যা হারাম ও কবিরা গুনাহ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এ ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে,‘তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদের জীবন ধ্বংসের মুখে ফেলো না। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)
আত্মহত্যা রোধে ইসলাম সতর্ক করেছে। বিভিন্ন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছে। আত্মহত্যাকে স্পষ্ট হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমরা তোমাদের নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর করুণাময়।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৯)
রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই একটি চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এরপর রক্তক্ষরণের কারণে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৩২৭৬; মুসলিম, হাদিস : ১১৩)
আত্মহত্যাকারী জাহান্নামে যাবে
আত্মহত্যার ব্যাপারে রাসুল (সা.) বিশেষভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামেও তার সেই যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। আর যে ব্যক্তি ধারালো কোনো কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, তার সেই যন্ত্রণাকেও জাহান্নামে অব্যাহত রাখা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৪৬)
আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে পাহাড় থেকে পড়ার অনুরূপ শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, সে স্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে বিষপানের আজাব ভোগ করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে তা দ্বারা শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৭৮)
ছাবিত বিন জিহাক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন :‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি প্রদান করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭০০; মুসলিম, হাদিস : ১১০)
জীবনে হতাশা, দুঃখ ও নৈরাশ্য আসবে। তবে তখন ধৈর্য ধারণ করতে হবে। শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। বরং দুঃসময়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। ইসতিগফার করতে হবে। নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা চাইতে হবে। সুখ-দুঃখের মালিক তিনিই। তার কাছে সুখের দোয়া করতে হবে। দুঃখের পর একদিন সুখ আসবেই। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই দুঃখের সঙ্গে সুখ আছে।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত : ৬)