নারী ও শিশু

তেভাগা আন্দোলনে নারী

কৃষ্ণা নিয়োগী

পিটার কাস্টারের লেখা, কৃষ্ণা নিয়োগির অনুবাদ তেভাগা আন্দোলনে নারী। বইটি বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে ১৯৯২ সালের মে মাসে।  অনেকেই হয়তো পড়েছেন। যারা তেভাগা আন্দোলনে নারী বইটি পড়েননি সেসব রাজনৈতিক কর্মিদের জন্য এই বইটি  হুবুহু ধারাবাহিক তুলে ধরলাম। লেখকের অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার ব্যর্থতা পারিনি। তাই লেখক ও অনুবাদকের কাছে কড়োজোড়ে ক্ষমাপ্রার্থী । 

ফকির ও সন্যাসীরা ছিলেন ভারতের বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের মধে অগ্রগণ্য। এদর অনেকেই যুদ্ধ ও নিষ্ঠুর কর ব্যবস্থার নিষ্পেষণে সর্বস্ব  হারিয়েছিলেন। এরা প্রথম দিকে তীর্থ ক্ষেত্রগুলিতে ইংরাজ কর্তৃক কর আরোপের বিরুদ্ধে এই প্রতিরোধ আন্দোলন ক্রমে জমিদারের গোলা ও ইংরাজ নীল কুঠির ওপর সশস্ত্র আক্রমণে পরিণত হয়। তীর্থ যাত্রীদের বিদ্রোহ পর্বে সর্বত্র   কৃষকদের আদেশ করা হয় ।

ঔপনিবেশিক শাসকদের কর না দিতে। তিরিশ বছরেরও বেশি দিন ধরে ফকীর ও সন্যাসিরা বাংলার উত্তর পূর্বে শ্রীহট্ট থেকে পশ্চিমে বিহারের নিকট জেলা পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বিচরণ করেছেন । বিদ্রোহের চূড়ান্ত পর্যায়ে হাজার হাজার সন্যাসী ফকীর ইংরাজ সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা লড়াই চালিয়েছিলন।

ওয়াহাবী এবং ফরাইজি বিদ্রোহ উভয়ই ছিলো চরিত্রগতভাবে আঞ্চলিক, যা সংঘটিত হয়েছিল কয়েক দশক ধরে, উনিশ শতকের প্রথমার্ধে। দুটিতেই ছিল ধর্মের প্রচ্ছন্ন আবরণ । শুরু হয়েছিল মুসলিম ধর্মীয় পুনর্গঠনে  আপাত উপলক্ষ নিয়ে। পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল ২৪ পরগনা জেলার বারসাত অঞ্চলে তিতুমীরের নেতৃত্বে। যিনি তার অনুগামিদের আদেশ দিয়েছিলেন জমিদারের খাজনা বন্ধ করে দিতে।

হাজার হাজার কৃষককে নিয়ে তিনি যে বাহিনী গঠন করেছিলেন, যা পুনরায় স্বৈরাচারি নীলকরদের কুঠী ও কারখানা আক্রমণ করেছিল। ফরিদপুর জেলায় গড়ে ওঠা ফারাইজি আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য ধর্মীয় প্রচার। পরবর্তি পর্যায়ে তার প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে ইংরাজ নীলকরেরা- যারা ছলেবলে কৌশলে লাভজনক নীলের চাষ করাতে চাষীদের বাধ্য করতো। ফরাইজী নেতা দুদু মিয়া বহু বছর ধরে ঔপনিবেশিক শাসনের সমান্তরাল শাসন ব্যবস্থ চালিয়েছেন । এক্ষেত্রেও জমি ও জীবিকা থেকে উচ্ছেদ হওয়া হাজার হাজার কৃষক তার সৈন্যদলে সামিল হয়েছিল।

১৮৫৫ থেকে ৫৬ খৃষ্টাব্দের সাওতাল বিদ্রোহ সেই সময়ে পর পর ঘটে যাওয়া অনেকগুলি আদিবাসী বিদ্রোহের অন্যতম ছিল। আর এই ব্যাপ্তি এবং দমনকালীন চরম নিষ্ঠুরতা- উভয়ের  জন্যই এই বিদ্রোহ বিখ্যাত। (তেভাগা আন্দোলনে নারী  চলবে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button