সাহিত্য

নিষেধের বই: বেস্টসেলারের কায়দা

আতা সরকার

নিষেধের বই… তখন তিনি উঠতি শক্তিমান কবি। কবিতাকে দুর্গম দুর্বোধ্য জন্মান্ধ করেও ছড়া আওড়ে জানতে চান মধ্যিখানের পায়ের কুশল, জানিয়ে দেন তার মস্তো বড়ো হাএর কথা। একই সাথে কলমের চাকতি ঘুরান এক্সপেরিমেন্টাল গল্পে, অর্ধবাক্যে লিখে চলেন প্রবন্ধ, লিখেন কাব্যনাটক, সম্পাদনা করেন এন্টিএস্টাবলিশমেন্ট লিটল ম্যাগাজিন আর এস্টাবলিশমেন্টপন্থী ম্যাগাজিন।

তার একটা গল্পের বই, প্রথম গল্পের বইই– সত্যের নামে নাম, সত্যও নাকি বদমাশ– এমন কিছু একটা। দর্শনগত জটিলতার কিছু কি? নাকি সত্যের বদমাইশীর স্বরূপ উদ্ঘাটন?

হতেও পারে বা। মূর্খ পাঠক অতো কিছু বুঝে না, তবে পেয়েছে কিছু সুড়সুড়ি। বোদ্ধা পাঠক উপভোগ করেছে তরুণ কবি-কাম-গল্পকারের স্টান্টবাজি।

একদিন শোনা গেল, এই নিষেধের বই সরকার নিষিদ্ধ করেছে।

প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা তখন মুক্তবুদ্ধি, চিন্তার স্বাধীনতা, বাংলা ভাষার বিকৃতি রোধ, বাঙ্গালী সংস্কৃতি নিয়ে আন্দোলনরত। পল্টন ময়দানে কবি সাহিত্যিকদের এক বিক্ষোভ সভায় এই বইটির নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ উঠল।

বইটির তখন মার মার কাট কাট অবস্থা। প্রকাশ্যে তো পাওয়া যায় না, ঘাপে ঘুপে বিক্রি হয়ে বইয়ের চলতি সংস্করণ শেষ।

দুষ্টলোকেরা বলে, নিষেধের বই নিষিদ্ধ হয়নি। কবির বন্ধু হোম মিনিস্ট্রির এক অফিসারকে দিয়ে শোকজ নোটিস শুধু পাঠানো হয়েছিল মাত্র। ঐ নিয়েই নিষেধের বই রংদার চটকদার করা হয়েছে।

প্রতিভাবান পিএ: কে সাহিত্যিক? কর্তা, নাকি পিএ?

পিএ সাহিত্যিক হবে, বা সাহিত্য চর্চা করবে তা কখনো ভাবেনি। এমনিতে সে চৌকস। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যটা তার বালো পড়া আছে। এর কারণ স্কুল জীবনে পন্ডিত স্যারের বেতের শব্দ আর পড়ার আগ্রহ।

কিন্তু তার স্যার সেই কবে থেকে সাধনা করে যাচ্ছেন সাহিত্যিক খাতায় স্বর্ণাক্ষরে নিজের নামটা জ্বলজ্বলে করে তোলার জন্য। কিন্তু কবি লেখকদের কনুইয়ের গুঁতোয় কিছুতেই কিছু করে উঠতে পারছিলেন না।

কপালটা খুলে গেল করপোরেট হাউজের বড় কর্তা হওয়ার পর। তখন তার বিজ্ঞাপন দেয়ার ক্ষমতা হাতে এসেছে, সিএসআর ফান্ড থেকে দুঃস্থ লেখক শিল্পীদের সাহায্যই শুধু নয়, মাসোয়ারা সিস্টেমে ভাতাও দিতে পারেন, ফাইভ স্টারসহ যত্রতত্র লিকুইড সেবন করাতে পারেন।

তাঁর দপ্তরে এখন প্রবীণ উঠতি দিগগজ কবি লেখকদের যেমন ভীড়, তেমনি পালে পালে আসেন পত্রিকার এডিটর; ফিচার এডিটর, সাহিত্য সম্পাদক, এস্টাবলিসমেন্টপন্থী/ এস্টাবলিসমেন্টবিরোধী হাজারো ম্যাগাজিনের সম্পাদকরা তো রয়েছেনই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button