Sub Lead Newsধর্ম

ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া ছিলেন দৃঢ়চেতা ঈমানদার সম্রাজ্ঞী

ধর্ম ডেস্ক

ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া ছিলেন দৃঢ়চেতা ঈমানদার সম্রাজ্ঞী। ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া আল্লাহর ওপর বিশ্বাসী ছিলেন। এ কারণে তিনি ফেরাউনের কঠিন নির্যাতনের মুখোমুখি হন। ফেরাউন নিজ স্ত্রীর ঈমান আনার খবর শুনে চরম রাগান্বিত হন।

এক পর্যায়ে ফেরাউন তার স্ত্রীকে চরম শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন। সে সময় ফেরাউনের জুলুম নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য দোয়া করেন। ফেরাউনের স্ত্রী আল্লাহর কাছে তার জন্য একটি ঘরের দোয়া করেন ।

মৃত্যুর আগে বিবি আছিয়ার আহ্বান মহান আল্লাহর কাছে এত অধিক পছন্দনীয় হয়ে যায় যে, তিনি মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়াস্বরূপ এবং ইসলামের সত্যয়নকারী হিসেবে এ আয়াত কোরআনুল কারিমে তুলে ধরেন-

رَبِّ ابْنِ لِي عِندَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِن فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ : রাব্বিবনি লি ইংদাকা বাইতান ফিল জান্নাতি ওয়া নাঝ্ঝিনি মিন ফিরআউনা ওয়া আমালিহি ওয়া নাঝ্ঝিনি মিনাল ক্বাওমিজ জালিমিন।’ (সুরা তাহরিম : আয়াত ১১)

অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনার কাছে জান্নাতে আমার জন্য একটি ঘর তৈরি করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন ও আমাকে জালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিন।

ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা ঈমানদার সম্রাজ্ঞী। প্রখর বুদ্ধিমত্তা, আভিজাত্য ও অর্থ-সম্পদে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। ফেরাউনের রাজপ্রাসাদে আল্লাহর নবী মুসা (আ.)-এর লালন-পালনের ব্যবস্থার মূলে ছিলেন তিনি।

পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘ফেরাউনের স্ত্রী বলল, সে [মুসা (আ.)] আমার ও তোমার চক্ষুশীতলকারী হবে, তোমরা তাকে হত্যা কোরো না, হয়তো সে আমাদের উপকার করবে কিংবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করব, তারা তা অনুধাবন করতে পারেনি।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৯)

ফেরাউনের ঘরে থেকেও নিজের বুদ্ধি-জ্ঞানকে স্বাধীন চিন্তার জন্য উন্মুক্ত করেন। রাজপ্রাসাদের সব রকম বিলাসিতা ত্যাগ করে স্বামীর ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেন। এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার কথা জানতে পেরে আসিয়ার প্রতি ফেরাউন ক্রোধান্বিত হয়। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনায় ফেরাউন আসিয়ার সঙ্গীদের হত্যা করে।

নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে শেষ মুহূর্ত ঘনিয়ে আসে আসিয়ার। মৃত্যুকালে আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর কাছে বিশেষ দোয়া করেন। আল্লাহর কাছে আবদার করেন, যেন জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর তৈরি করা হয়। এই মহীয়সী নারীর জীবনের শেষ আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ তাআলার পছন্দ হয়।

ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ মুমিনদের জন্য ফেরাউনের স্ত্রীর উপমা পেশ করছেন, তিনি বলেন, হে আল্লাহ, আমার জন্য জান্নাতে আপনার কাছে একটি ঘর নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফেরাউন ও তার কার্যাবলি থেকে রক্ষা করুন এবং আমাকে জালেম জনগোষ্ঠী থেকে রক্ষা করুন।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ১১)

পৃথিবীর পুণ্যবতী নারীদের একজন আসিয়া। আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষদের মধ্যে অনেকে পুণ্য অর্জন করেছেন। তবে নারীদের মধ্যে পুণ্য অর্জন করেছেন শুধু মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া। আর সব খাবারের মধ্যে সারিদ যেমন শ্রেষ্ঠ, তেমনি সব নারীদের মধ্যে আয়েশা শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪১১ ও মুসলিম, হাদিস : ২৪৩১)

ঈমানি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারীদের একজন আসিয়া। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) জমিনে চারটি রেখা টেনে বলেন, ‘তোমরা কি জানো এটা কী?’ সাহাবারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুল জানেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘জান্নাতবাসীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হলেন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৯০৩)

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button