
মধ্যযুগ সম্বন্ধে কোন আলোচনার সূত্রপাতেই পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিকগণ যে শব্দটি উচ্চারণ করেন তা হলো ‘বর্বরতা’,- এ যুগ একবাক্যে ‘বর্বর মধ্যযুগ’ হিসেবে চিহ্নিত। বর্বরতার এই পটভূমি মূলতঃ পাশ্চাত্যেরই। তখনকার পাশ্চাত্যে সভ্যতার আলোকিত জগত বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন দিক দিয়ে রুদ্ধ ছিল। কিন্তু পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিকগণ সজ্ঞানে কিংবা অসেচতনভাবে মধ্যযুগের ভিন্ন গোলার্ধের আলোকিত অংশটির পড়ুক দৃষ্টিপাত করেননি, কিংবা করার প্রয়োজন বোধ করেননি। জন্য তাঁরা পাশ্চাত্যের ইতিহাসকেই টেনে এনে পুরো পৃথিবীর গোটা মধ্যযুগকেই বর্বর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বস্তুতঃ তৎকালীন ইউরোপীয় সাংবাদিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে এবং রাষ্ট্র-চিন্তা বিশ্লেষণ করলে মধ্যযুগকে এর বাইরে ভাবা যায় না। সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টটলের রাষ্ট্র-দর্শনের ঐতিহ্য ধারণ করেও মধ্যযুগের ইউরোপ আলোকিত জগতের প্রতি দিক-নির্দেশ করতে পারেনি।
মধ্যযুগকে দুটো কাল-প্রথমে চিহ্নিত করা যায়:
ক. প্রাচীন মধ্যযুগ;
খ. পরবর্তী মধ্যযুগ।
ইউরোপে খৃস্টীয় মতবাদের আবির্ভাব ও শক্তিসঞ্চয় এবং গীর্জার অধিষ্ঠান থেকে রেনেসাঁর পূর্ব পর্যন্ত সময়কালকে মধ্যযুগ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। পুরো মধ্যযুগের ইউরোপ ক্যাথলিক মতবাদ শাসিত; এই বৃত্তেই ইউরোপীয় চিন্তা-চেতনার সীমাবদ্ধতা।
বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর ‘History of Western Philosophy’ গ্রন্থে বিষয়টিকে এভাবে উপস্থাপন করেছেন:
“Catholic philosophy, in the sense in which I shall use the time, is that which dominated European thought from Augustine to the Renaissance. There have been philosophers, before and after this period of ten centuries, who belonged to the same general school. Before Augustine there were the early Fathers, especially Origin; after the Renaissance there are many, including, at the present day, all orthodox Catholic teachers of philosophy, who adhere to some medieval system, especially that of Thomas Aquinas. But it is only from Augustine to the Renaissance that the greatest philosophers of the age are concerned in building up or perfecting the Catholic synthesis.”
বার্ট্রান্ড রাসেল মধ্যযুগের সময়পরিধি ও খৃস্টীয় ক্যাথলিক মতবাদের কালিক আওতা নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু কেউ কেউ মধ্যযুগের উপরিউক্ত সময় পরিধিকে স্বীকার করার ক্ষেত্রে আপত্তি করেছেন। জর্জ সেবাইন তাঁর ‘A History of Political Thought’ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে প্রথমে:”
খৃস্টীয় ষষ্ঠ কিংবা সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত গীর্জার যাজকদের যে যুগ তা এখনো প্রাচীন যুগেরই অংশ। খৃস্টান ধর্মের প্রথম ছয় শত বছরে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভূত পরিবর্তন সাধিত হওয়া সত্বেও সিনেকা ও সেন্ট গ্রেগরি উভয়ে রোমান ঐতিহ্যেরই ধারক। একটি স্বায়ত্বশাসিত সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গীর্জার অভ্যুদয় হওয়া সত্বেও, এমনকি সাম্রাজ্যের পতনের ফলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল, গ্রেগরীর আমলে প্রয়োজনের তাগিদে তা পুরণ করতে বাধ্য হওয়া সত্বেও, প্রাচীন বিশ্বের ধারাবাহিকতার সাথে তা কোন বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেনি।”…………
বর্বরতার কালো অধ্যায়: রাষ্ট্রচিন্তার বন্ধ্যাকাল লেখাটি পড়ুন আগামি সংখ্যায়।