
করোনার প্রকোপ ঠেকাতে সরকারঘোষিত ১১ দফা বিধিনিষেধের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠানসহ সামাজিক সমাবেশ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনে একটি অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওমিক্রনের লাগাম টেনে ধরতে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কারণ না থাকলেও এটি আশঙ্কাজনক। আমরা জেলা প্রশাসকদের বলেছি, আপনারা গতবার যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করেছেন, এবারও সেটা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নের মূল হাতিয়ার আপনারা। আপনারা যেহেতু জেলার দায়িত্বে আছেন, সবাইকে নিয়ে কাজ করেন। স্থানীয় প্রতিনিধি যারা আছে, তাদের নিয়েও কাজ করেন। তদের নিয়ে কাজ করলে আপনাদের কাজ আরও ভালো হবে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘বাসে, ট্রেনে, স্টিমারে যখন লোক চলবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। বিয়ের অনুষ্ঠানসহ সামাজিক সমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। এ বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরেছি। ল্যান্ড-পোর্ট, সি-পোর্টসহ বিভিন্ন পোর্ট যেন তারা ঠিকমতো দেখেন। যারা কোয়ারেন্টাইনে আছেন তারা অনেক সময় এটি ঠিক মতো মানেন না। এ বিষয়ে তাদের নজরদারি করতে বলেছি, যেন কোয়ারেন্টাইন ঠিক মতো হয়।’
‘দেশে মাদক বেড়েছে, এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি হচ্ছে এ বিষয়েও তাদের নজরদারি বাড়াতে বলেছি। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
দেশকে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে ভালো রাখতে হলে অবশ্যই করোনার লাগাম টেনে ধরতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত আছি। আগের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে আছি। টেস্টের কোনো অভাব নেই, ৮০০ ল্যাব আছে। আমাদের কিট আছে, অক্সিজেনের অভাব নেই। প্রায় ৮৩০টি হাসপাতালে অক্সিজেন স্থাপন করা হয়েছে, যেটা আগে ছিল না। আমাদের মেডিসিনের ব্যবস্থা রয়েছে, ২০ হাজার বেড আছে। তাছাড়া ৪০ হাজারের মতো নতুন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৫ হাজারের মতো ডাক্তার ও ২০ হাজার নার্স রয়েছে। সার্বিক বিষয়ে প্রস্তুতি ভালো।’
টিকা কার্যক্রমে জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘টিকা কার্যক্রমেও তারা সহযোগিতা করছে, করবে। আমরা ১২ কোটি মানুষকে টিকার ডাবল ডোজ দিতে চাই। আমাদের হাতে এখন ৯ কোটি টিকা আছে, যেটা অনেক দেশের নেই। বুস্টার ডোজ নিয়েও আমাদের আলোচনা হয়েছে।’
মাস খানেকের মধ্যে দেশের স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ কোটি ২৫ লাখ টিকা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের যে নদী-নালা, খাল-বিল দূষণ করছে শিল্প থেকে, সেগুলো যাতে তারা (ডিসি) খেয়াল করে। তাতে স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। যারা এসব পানি ব্যবহার করছে, তারা বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের দাবি ছিল, ডিভিশনাল পর্যায়ে হাসপাতাল, আমরা এরই মধ্যে ডিভিশনাল পর্যায়ে হাসপাতাল নির্মাণকাজ শুরু করেছি। কয়েকদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালের উদ্বোধন করেছেন। একেকটি হাসপাতাল সাড়ে চারশো বেডের। যেখানে ক্যান্সার কিডনি ও হার্টের ট্রিটমেন্ট হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এরকম আরও হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। যার মধ্যে থাকবে নিউরো-সায়েন্সের চিকিৎসা, অর্থপেডিক চিকিৎসা, মেন্টাল হেলথ ও স্কিনের চিকিৎসার কার্যক্রম চলমান। তাদের সহযোগিতা আগে যেভাবে পেয়েছি, সেই সহযোগিতা আমরা তাদের কাছে চেয়েছি। কারণ দেশ যদি অর্থনৈতিকভাবে ভালো থাকতে হয়, তাহলে করোনা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণে ছিল ও নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা বলবৎ রাখতে হবে।’
তিনি আরও জানান, আমরা বুস্টার ডোজ দিয়ে যাচ্ছি, আমরা একমাসের মধ্যে ১ কোটি ২৫ লাখ ছাত্রকে ভ্যাকসিন দিয়ে ফেলেছি। ৯০ শতাংশের বেশি তারা ভ্যাকসিনেটেড হয়ে গেছে। আমরা প্রত্যেকটি জেলা হাসপাতালে ১০ বেড আইসিইউ, ১০ বেড ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেটা এখন ইনস্টলেশনের পর্যায়ে রয়েছে। আগেই এটা একনেকে পাস করা। সুতরাং, অল্প সময়ের মধ্যে এটা হয়ে যাবে। আমরা আলোচনা করেছি, আশা করি তারা (ডিসি) কঠোর পদক্ষেপ নেবে।’