
বুদ্ধদেব বসুর মৃত্যু দিবস আজ। ১৯৭৪ সালের ১৮ মার্চ ভারতে মৃত্যুবরণ করেন। বুদ্ধদেব বসু প্রভাবশালী বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক, সম্পাদক ও সাহিত্য-সমালোচক ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর বিশ ও ত্রিশের দশকে আধুনিক কবিতার যারা পথিকৃৎ তিনি তাদের একজন।
১৯০৮ সালের ৩০ নভেম্বর মাতামহের বাড়ী কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৮ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সচ্চিদানন্দ ইনস্টিটিউশনে পড়াশোনা করেন। ১৯২১ সালে ১৩ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় আসেন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন।
১৯২৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলে থেকে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আই. এ. পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ইংরেজিতে ১৯৩০-এ প্রথম শ্রেণিতে বি. এ. অনার্স এবং ১৯৩১-এ প্রথম শ্রেণিতে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন।
অধ্যাপনা দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু। ছাত্রজীবনে ঢাকায় তিনি যে নিরীক্ষা শুরু করেন প্রৌঢ় বয়সেও সেই নিরীক্ষার শক্তি তার মধ্যে প্রত্যক্ষ করা যায়। তার প্রথম যৌবনের সাড়া এবং প্রাক-প্রৌঢ় বয়সের তিথিডোর উপন্যাস দু’টি দুই ধরনের নিরীক্ষাধর্মী রচনা। তার চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের রচনাগুলোর মধ্যে গ্রিক, ল্যাটিন, সংস্কৃত নানা চিরায়ত সাহিত্যের উপমার প্রাচুর্য দেখা যায়। অতি আধুনিক উপন্যাসের গীতিকাব্যধর্মী উপন্যাস রচনা করেছিলেন বুদ্ধদেব বসু।
বুদ্ধদেব বসুর মৃত্যু দিবস
তিনি বাংলা গদ্যরীতিতে ইংরেজি বাক্যগঠনের ভঙ্গি সুপ্রসিদ্ধ করেছেন। পরিমার্জিত সঙ্গীতমগ্নতা ও পরিশীলিত স্বতঃস্ফূর্ততা বুদ্ধদেব বসু’র গদ্যের বৈশিষ্ট্য। কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, সমালোচনা, নাটক, কাব্যনাটক, অনুবাদ, সম্পাদনা, স্মৃতিকথা, ভ্রমণ, শিশুসাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে বসু’র প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫৬টি।
বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পত্তনে যে কয়েকজনের নাম সর্বাগ্রে স্মরণীয়, বুদ্ধদেব বসু তাদের মধ্যে অন্যতম। তাকে কল্লোল যুগ-এর অন্যতম প্রধান কাণ্ডারি হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলা কবিতায় আধুনিক চিন্তা-চেতনা এবং কাঠামো প্রবর্তনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে পশ্চিমা সাহিত্যের সঙ্গে তার সম্যক পরিচয় ছিল।
তার উল্লেখযোগ্যকাব্যগ্রন্থ: মর্মবাণী, বন্দীর বন্দনা, একটি কথা, পৃথিবীর প্রতি, কঙ্কাবতী, দময়ন্তী, দ্রৌপদীর শাড়ি, শ্রেষ্ঠ কবিতা। একদা তুমি প্রিয়ে, সাড়া, সানন্দা, লাল মেঘ, বাসরঘর, পরিক্রমা, কালো হাওয়া, তিথিডোর, নির্জন স্বাক্ষর, নীলাঞ্জনের খাতা। রজনী হ’ল উতলা, অভিনয়, অভিনয় নয়, রেখাচিত্র, হাওয়া বদল, শ্রেষ্ঠ গল্প, একটি জীবন ও কয়েকটি মৃত্যু, হৃদয়ের জাগরণ, ভাসো আমার ভেলা, প্রেমপত্র।
হঠাৎ-আলোর ঝলকানি, কালের পুতুল, সাহিত্যচর্চা, রবীন্দ্রনাথ: কথাসাহিত্য, স্বদেশ ও সংস্কৃতি, সঙ্গ নিঃসঙ্গতা ও রবীন্দ্রনাথ, কবি রবীন্দ্রনাথ, সমুদ্রতীর, আমার ছেলেবেলা। বুদ্ধদেব ১৯৭০ সালে পদ্মভূষণ উপাধি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।