Sub Lead Newsশিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি ব্যবস্থা কি পশ্চাৎপদ

মেহেদী হাসান মিশন

বাংলাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি ব্যবস্থা পশ্চাৎপদ বলে ধারণা হচ্ছে। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন সূচকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি যেন পেছন দিকে চলছে।

এমন একটি পদ্ধতি চালু করা হয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যা অত্যন্ত বাজে, যৌক্তিকতা বিবর্জিত এবং পশ্চাৎপদ চিন্তাধারার। লটারি পদ্ধতি ভর্তি ব্যবস্থা কোনভাবেই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না। যেখানে লটারি একধরনের জুয়া। আর জুয়াকে কখনও ন্যায়সঙ্গত বলা যেতে পারে না। বরং প্রায় সকল সমাজ ব্যবস্থা, নীতিশাস্ত্র ও ধর্মেই এটি দোষনীয় এবং ঘৃণিত কাজ।

প্রতিটি ধর্ম ও পুরাণে জুয়া/লটারিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে এতে মানুষের কোন কল্যাণ থাকতে পারে না। জুয়া/লটারি আসক্তি মানুষকে সর্বনাশের দিকে ধাবিত করে।

মহাভারতে পান্ডব পত্নী দ্রৌপদীর সম্ভ্রমহানির শিকার হওয়ার জন্য এই জুয়াই দায়ী। দ্রৌপদী দৈব ক্ষমতায় সম্ভ্রমহানি থেকে রক্ষা পেলেও আমাদের কোমলমতি বাচ্চাদের ভর্তি জুয়ার ভাগ্য থেকে রক্ষা করবে কে?

ইসলাম পূর্ববর্তী যুগেও তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ধারণের প্রচলন ছিল। ইসলাম পরবর্তীতে সেগুলোর অবসান হয়। শুধু তাই নয়, কোরআনে স্পষ্টভাবে জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ শিক্ষার্থীদেরকেই জুয়ার আওতায় আনা হচ্ছে একেবারে কাঁচা বয়সে। কোন নীতিগত দিক থেকে শিক্ষক সমাজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বুদ্ধিজীবীগণ এটাকে কি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেন?

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি ব্যবস্থা কি পশ্চাৎপদ

একজন শিক্ষার্থীর মানসিক গঠন, কর্মদক্ষতা, মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় হল ছাত্রজীবন। আর মাধ্যমিক থেকেই শিক্ষার্থীর মানসিক গড়ন পরিপক্ক হতে থাকে। এই বয়সে সে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে বুঝতে শেখে। এসময় কোন কিছুর প্রাপ্তি ও হারানোই তাদের মনে গভীরভাবে দাগ কাটে। সে প্রাপ্তি বা হারানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনার মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে। এবং সে বুঝতে শেখে কোনো কিছু অর্জনের জন্য আমাকে কতটুকু শ্রম দিতে হবে। কোনটা আমার পক্ষে করা সম্ভব আর কোনটা সম্ভব নয়।
একজন শিক্ষার্থী যদি তার সক্ষমতার উপর নির্ভরশীল না হয়ে লটারির উপর নির্ভর করে তাহলে তার মানসিক গড়ন কেমন হবে?

বর্তমান লটারি ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ভাল স্কুলে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা জুয়ার উপর নির্ভরশীল। এখানে তাদের সক্ষমতা বা অক্ষমতা যাচাইয়ের সুযোগ নেই। এতে অনেক শিক্ষার্থীই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে, সাথে অভিভাবকবৃন্দও। অনেক দরিদ্র মেধাবী ছাত্র সরকারি স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থীই লেখাপড়ায় পূর্বের মত মনযোগী থাকছে না।

একজন শিক্ষার্থীর মানসিক বোধই যদি এমনভাবে গঠিত হয় যে, জুয়ায় তার ভাগ্য নির্ধারণ করবে, তাহলে সে পরবর্তী জীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ে, চাকরিতে প্রবেশের জন্যও যোগ্যতা বাদ দিয়ে জুয়া ভাগ্যের উপরই নির্ভর করবে।

এমন দাবি যদি কেউ করে মাধ্যমিকে ভর্তিতে যদি লটারি ব্যবস্থা থাকতে পারে তাহলে, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাকরি ক্ষেত্রে কেন লটারি ব্যবস্থা থাকবে না। সব জায়গায়ই লটারি ব্যবস্থা করা হোক। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও। তো সেই লটারি/জুয়া ভাগ্যে আপনার কপাল ভালো হলে আপনিও হয়ে যেতে পারেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button