
কোরআন-হাদিসে রোজা না রাখার কঠিন শাস্তি কথা বলা হয়েছে। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মুসলিমের ওপর রোজা রাখা ফরজ। কেউ রোজাকে অস্বীকার করলে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। শরীয়তের দৃষ্টিতে ইসলামের প্রধান বিধান রোজা অস্বীকার করা ব্যক্তিকে কাফের ও মুরতাদ বলে গণ্য করা হয়।
রমজানের রোজা রাখা হলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রতিদান লাভের মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা, রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম-১৫৫১)
রোজার প্রতিদান বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
তবে রমজান মাসে অসুস্থ, অতিবৃদ্ধ, মুসাফির, গর্ভবতী নারীর জন্য রোজা না রেখে পরবর্তীতে রোজার কাজা, কাফফারা, ফিদইয়া ইত্যাদি বদলা ব্যবস্থা স্থির করে শরিয়তে সুনির্দিষ্ট বিধি-ব্যবস্থা রয়েছে।
এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এ (সিয়াম) যাদের অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদ্ইয়া-একজন মিসকিনকে অন্নদান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে, তবে সেটা তার পক্ষে অধিকতর কল্যাণকর। তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। আর কেউ পীড়িত থাকলে অথবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যেটা সহজ সেটাই চান এবং যা তোমাদের জন্য ক্লেশকর, তা চান না এ জন্য যে তোমরা সংখ্যা পূরণ করবে।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৪-১৮৫)
আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এ সময় দুইজন ব্যক্তি এসে আমার দুই বাহু ধরে আমাকে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তারা বলল, পাহাড়ে উঠুন।
রোজা না রাখার কঠিন শাস্তি
আমি বললাম, আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা বলল, আমরা আপনার জন্য সহজ করে দিচ্ছি। আমি উঠা শুরু করি এবং পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছি। সেখানে প্রচণ্ড চিৎকারের শব্দ শোনা যায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কিসের শব্দ? তারা বলল, এটা জাহান্নামিদের আওয়াজ।
এরপর তারা আমাকে এমন কিছু লোকদের কাছে নিয়ে যায় যাদেরকে পায়ের টাখনুতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের গাল ছিন্নবিন্ন, তা হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা এমন রোজাদার যারা (অকারণে রমজান মাসের) রোজা শেষ না করেই ভঙ্গ করত।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং : ১৫০৯)
আরেক হাদিসে আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে। তাদের গলাটি ফাড়া এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা? বলা হল, এরা ঐসব ব্যক্তি যারা বিনা উযরে রমজান মাসের সিয়াম ভঙ্গ করেছিল।’ (সহীহ ইবনে খুযাইমাহ)
ইমাম যাহাবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মুমিনদের কাছে এ কথা স্থির-সিদ্ধান্ত যে, কোনো ব্যক্তি রোগ ও ওজর না থাকা সত্ত্বেও রমজানের রোজা ত্যাগ করে, সে ব্যক্তি একজন ব্যভিচারী ও মদ্যপায়ী থেকেও নিকৃষ্ট। বরং মুসলিমরা তার ইসলামে সন্দেহ পোষণ করে এবং ধারণা করে যে, সে একজন নাস্তিক ও নৈতিক শৈথিল্যপূর্ণ মানুষ।’ (মাজমু ফাতাওয়া ২৫/২২৫, আল-কাবায়ের ৪৯পৃঃ, ফিকহুস সুন্নাহ ১/৩৮৪, ফাইযুর রাহীমির রাহমান, ফী আহকামি অমাওয়াইযি রামাযান ২০-২১পৃঃ)