Exclusive 1জাতীয়

লবিস্ট নিয়োগের অর্থ কোথায় পেল বিএনপিঃ প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা নিউজ হাব ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে। লবিস্ট নিয়োগের অর্থ কোথায় পেল বিএনপি, এর ব্যাখ্যা তাদের দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) একাদশ জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা ও অধিবেশনের সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মিথ্যা অপবাদ আর অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত এবং বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রে লবিষ্ট নিয়োগ দিয়েছে। বিদেশি ফার্মকে কোটি কোটি ডলার তারা পেমেন্ট করলো- এই অর্থ কীভাবে বিদেশে গেল? লবিস্ট নিয়োগের অর্থ কোথা থেকে এলো তার জবাব তাদের দিতে হবে। এর ব্যাখ্যা তাদের দিতে হবে।

সরকারের লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, সব সময় পিআর ফার্ম নেওয়া হয়। যাতে বিনিয়োগ বাড়ে, উৎপাদন বাড়ে। আমরা যেন বেশি রপ্তানি করতে পারি। দেশের অধিকার সংরক্ষণ করার জন্য করা হয়। কিন্তু বিএনপির কাজটি কী ছিল?

লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ এবং এর পেছনে ব্যয় সংক্রান্ত বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কত লাখ ডলার বিএনপি খরচ করেছে, এটা আমার প্রশ্ন। লবিস্ট নিয়োগের অর্থ কোথা থেকে তারা পেল? এটা তো বৈদেশিক মুদ্রা। বিএনপি এই বৈদেশিক মুদ্রা পেয়েছে কোথায় থেকে। কীভাবে খরচ করেছে? কীভাবে এই লবিস্ট তারা এভাবে রেখেছে? লবিস্ট কিসের জন্য? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর জন্য। নির্বাচন বানচাল করার জন্য। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। জঙ্গিদের রক্ষা করার জন্য। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে বাধা দেওয়ার জন্য। কোনো ভালো কাজের জন্য নয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের র‌্যাবের কিছু অফিসারের বিরুদ্ধে আমেরিকা স্যাঙ্কশন (নিষেধাজ্ঞা) দিয়েছে। যদি বলি কাদের ওপর? এখন আমাদের বর্তমান আইজিপি, তখন র‌্যাবের ডিজি ছিলেন। হলি আর্টিজানে যখন সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে। মানুষ হত্যা করে। নৃশংস দৃশ্য। পুলিশের দুজন অফিসার সেখানে ছুটে গেলে তাদের গুলি করে মেরে ফেলে। এরপর আমরা পদক্ষেপ নেই। সেই সময় আমেরিকার যিনি রাষ্ট্রদূত ছিলেন তিনি টুইট করেছিলেন- হলি আর্টিজানের সন্ত্রাসী হামলা বাংলাদেশ একা সমাধান করতে পারবে না। রোজার দিন ছিল। সারারাত আমরা কাজ করেছি। সেহেরির সময় পর্যন্ত আমি বৈঠক করি। সবাইকে নিয়ে মিটিং করি। কী করা হবে। কীভাবে অপারেশন চালানো হবে। পরদিন সকাল নয়টার মধ্যে জিম্মিদের উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সফলতার সঙ্গে তাদের আক্রমণ মোকাবিলা করি। এরপরই আমেরিকার অ্যাম্বাসেডর টুইট সরিয়ে ফেলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমন করেছি। যেটা বিএনপির সৃষ্টি। যাদের তারা (যুক্তরাষ্ট্র) স্যাঙ্কশন দিলো তাদের অধিকাংশ এই সন্ত্রাস দমনে ভূমিকা রেখেছিল। তাহলে এরা কেন আমেরিকার কাছে এত খারাপ হলো? সব থেকে ভালো ভালো অফিসার যারা। আমি আমেরিকাকে দোষ দেই না। ঘরের ইঁদুর বাঁধ কাটলে কাকে দোষ দেবো?

অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আজকের এই দিনে আমাদের তখনকার সংসদ সদস্য সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করা হয়েছিল। সেই হত্যার সঙ্গে বিএনপি জড়িত, সেটাও বেরিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে এর বিচারের কাজটি বার বার বাধা দিচ্ছে তার পরিবার থেকে। যখনই বিচারের কাজটি শুরু হয় অমনি তার পরিবার একটা বাধা দিয়ে রাখে। কেন ঠিক জানি না।

‘আমার চিন্তা ছিল দেশটাকে পিছিয়ে যেতে দেবো না’- এমন প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর আমরা রিফিউজি হিসেবে ৬ বছর বাস করেছি দুই বোন। নাম পরিচয়টাও ব্যবহার করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল- সুযোগ পেলে দেশকে গড়ে তুলবো। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে দেশে ফিরি। অনেক বাধাবিপত্তি, অনেক অপপ্রচার শুনতে হয়েছে। লক্ষ্য স্থির করে চলেছি বলে লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনায় আমেরিকার আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। কিন্তু আমাদের এখানে কেউ দারিদ্রসীমার নিচে যায়নি। বরং দারিদ্র্যের হার বিএনপির আমলের ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। বিশ্বাস করি আরও আমরা কমাতে পারবো। যদিও দারিদ্র্য আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমিত অর্থনীতির মধ্যেও আমরা বিনা পয়সায় করোনার পরীক্ষা করাচ্ছি। প্রায় ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা লাগে এক একটি করোনার পরীক্ষার জন্য। পাশাপাশি বিনা পয়সায় আমরা টিকাও দিচ্ছি। দেশবাসীকে আহ্বান জানাই, যারা ভ্যাকসিন নেননি, ভ্যাকসিন নেবেন কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা ভ্যাকসিনের জন্য আলাদা বাজেট দিয়েছি। ভ্যাকসিনের অভাব হবে না। যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে মারা যাচ্ছে না। সবাই টিকা নেবেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলবেন। যাতে অমিক্রন থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারি।

সরকারের কাছে এখন ২০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে বোরো মৌসুম আসছে। আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব হবে না। তবে কিছু কিছু জায়গায় দাম বাড়ানোর নানা ধরনের কিছু করা হয়। কিছু কিছু সিন্ডিকেট তৈরি হয়। মাঝে মধ্যে চেষ্টা করে। সেটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button