শাবিপ্রবি রণক্ষেত্র, পুলিশ-শিক্ষক গুলিবিদ্ধ
প্রতিবেদক, শাবিপ্রবি

শাবিপ্রবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য, ১০ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১৫ জন শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ এবং এক নারী পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে ঘটনার সূত্রপাত। পরে তা পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা ভবনের কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, শিক্ষক সমিতির নেতা, প্রক্টরিয়াল বডি ও কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের তালা খুলে দিতে বলেন। শিক্ষার্থীরা এতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বাগবিতণ্ডা হয়।
এসময় কোষাধ্যক্ষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করে বলেন, ভেতরে অবরুদ্ধ থাকায় উপাচার্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে বাসায় নিয়ে যেতে হবে। তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীরা সরে গেলে তালা ভেঙে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর উপাচার্যকে উদ্ধার করে পুলিশ তার বাসভবনে নিয়ে যায়। এরপর আধাঘণ্টা পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে কার্যালয়ের সামনে দেখা মাত্র দৌড়ে এসে তাকে ঘিরে ফেলেন। তারা উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, শাবিপ্রবি উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাকে দেখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য স্লোগান দিয়ে পথ অবরোধ করেছিলেন।
এর আগে বিকেল পৌনে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মহিবুল আলম, বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর কবিরসহ অন্যান্য শিক্ষকরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তারা শিক্ষার্থীদের বলেন, উপাচার্য দাবি মেনে নিয়েছেন, বাস্তবায়নে এক সপ্তাহ সময় চান। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এ কথা প্রত্যাখ্যান করে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেনি। শিক্ষকরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হন। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলাও চালান। এতে তিনিসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
শাবিপ্রবি -এর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা খুবই মর্মাহত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।