
হিজাব বা পর্দার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইসলামে। নারী জাতির নিরাপত্তা ও মর্যাদার অন্যতম প্রতীক এটি। ইসলামি শরিয়ত নারীর হিজাব বা পর্দার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নারীর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব এতে সমুন্নত ও সুউচ্চ হয়। হিজাব পরা মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশ।
হিজাব বা পর্দার বিধান দেওয়ার উদ্দেশ্য
নারীর চলাফেরা, পোশাক-পরিচ্ছদ- রূপ-সৌন্দর্য প্রকাশের ক্ষেত্রে যে সব শর্তারোপ করা হয়েছে তা শুধু তাকে সংরক্ষণ করার জন্যই। চলাফেরা, পোশাক-পরিচ্ছদ কিংবা সৌন্দর্যের প্রকাশের কারণে যে বিপর্যয় বা ক্ষতি হতে পারে তার সেসব পথ বন্ধ করার জন্যই হিজাব বা পর্দার বিধান দেওয়া হয়েছে। এটা নারীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হবে এ জন্য নয়। নারীকে অন্যের লোলুপ দৃষ্টি থেকে রক্ষা করা, তার পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের মানকে সংরক্ষিত করাই মূল উদ্দেশ্য।
হিজাবের মর্যাদা
হিজাব বা পর্দা মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের নির্দেশ। এ নির্দেশ মেনে চলা প্রত্যেক নারী-পুরুষের জন্য ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো আদেশ করলে কোনো ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার কোনো অধিকার নেই। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ অমান্য করবে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৩৬)
পর্দার বিধান সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ-
‘ইমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে ও তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন সাধারণত: প্রকাশমান স্থান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩১)
‘তোমরা ঘরের ভেতরে অবস্থান করবে; মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদের প্রদর্শন করবে না।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৩৩)
‘তোমরা তার স্ত্রীগণের কাছ থেকে কোনো কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৩)
‘হে নবি! আপনি আপনার স্ত্রী ও কন্যাদের ও মুমিনদের স্ত্রীদের বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৯)
পর্দা নারীর পবিত্রতা
হিজাব বা পর্দা পরা নারীরা খোলামেলা চলাফেরা করা নারীদের থেকে অনেক বেশি নিরাপদ। এতে নারীরা অন্যের দ্বারা হয়রানির শিকার থেকেও মুক্তি পায়। কোরআনে বিষয়টি এভাবে ওঠে এসেছে-
হিজাব বা পর্দার নির্মলতা
আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা নবির ঘরসমূহে প্রবেশ করো না; অবশ্য যদি তোমাদের খাবারের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে (প্রবেশ কর) খাবারের প্রস্ত্ততির জন্য অপেক্ষা না করে। আর যখন তোমাদের ডাকা হবে তখন তোমরা প্রবেশ কর ও খাবার শেষ হলে চলে যাও আর কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ো না; কারণ তা নবিকে কষ্ট দেয়; সে তোমাদের বিষয়ে সঙ্কোচ বোধ করে; কিন্তু আল্লাহ সত্য প্রকাশে সঙ্কোচ বোধ করেন না। আর যখন নবিপত্নীদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র। আর আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেয়া এবং তার (মৃত্যুর) পর তার স্ত্রীদের বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য সঙ্গত নয়। নিশ্চয়ই এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর পাপ।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৩)
পর্দা বা হিজাব দুর্বল অন্তরের মানুষদের কু প্রবৃত্তিকে বিনষ্ট করে দেয়। কোরআনের আয়াতে তা প্রমাণিত। এ জন্য নারীরা পরপুরুষের সঙ্গে কখনো নম্র ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে নবী-পত্নিগণ, তোমরা অন্য কোনো নারীর মতো নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো, তবে পরপুরুষের সঙ্গে কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৩২)
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা লজ্জাশীল গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা পছন্দ করেন।
হিজাব বা পর্দা হলো ঈমান
আল্লাহ তাআলা শুধুমাত্র ঈমানদার নারীদের উদ্দেশ্যে করেই পর্দা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ঈমানদার ছাড়া অন্য কাউকে পর্দার নির্দেশ দেননি।
হাদিসে পাকে এসেছে, একবার বনি তামিম গোত্রের কিছু নারী উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে আগমন করেন, তাদের পরনে ছিল পাতলা পোশাক। তিনি বললেন, তোমরা যদি মুমেনা হয়ে থাক, তবে এটা ইমানদার নারীর পোশাক নয়। আর যদি ইমানদার না হয়ে থাক, তবে এ পোশাক দ্বারা উপকৃত হতে পারবে।
আত্মসম্ভ্রমবোধ সম্পন্ন পুরুষের জন্যও পর্দা মানানসই; যে পুরুষ নিজ স্ত্রী ও কন্যাদের প্রতি পর পুরুষের দৃষ্টির লোলুপতায় মর্যাদাবোধে আঘাত প্রাপ্ত হয়। জাহেলি যুগে ও ইসলামের মধ্যেও অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে নারীর মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষার জন্য।
মনে রাখতে হবে, পর্দা কিংবা হিজাবই নারীর জন্য নিরাপদ। পর্দা বা হিজাব নারীর স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ নয়; বরং নারীর নিরাপত্তার অন্যতম রক্ষাকচব। আর এটাই মহান আল্লাহ বিধান।