Exclusive 1জাতীয়

চলতি বছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি সারে: কৃষিমন্ত্রী

প্রতিবেদক, ঢাকা নিউজ হাব

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ার ফলে চলতি অর্থবছরে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি লাগবে সারে। আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে উল্লেখ করেন তিনি।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এফডিসিতে ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এ বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সবার জন্য নিরাপদ খাবারের নিশ্চয়তা দিতে নিরলসভাবে কাজ করছে। সেজন্য নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন করেছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ চলছে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মানের অনেকগুলো ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। আরো অনেকগুলো স্থাপনের উদ্যোগ চলছে।

বিদেশে রপ্তানি করার ক্ষেত্রেও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরো বলেন, নিরাপদ ফসলের উৎপাদনের প্রচেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে উত্তম কৃষি চর্চা মেনে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি মেনে ফসল উৎপাদিত হলে খাবার যেমন নিরাপদ ও পুষ্টিকর হবে, তেমনই রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক মানের প্যাকিং হাউস ও ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আমরা সক্ষম হব।

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হলে সাধারণ মানুষের আয়ও বাড়াতে হবে। আয় বাড়াতে না পারলে, জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে ভেজাল ও অনিরাপদ খাবারের প্রকোপ আরো বাড়বে। সেজন্য, মানুষের আয় বৃদ্ধি ও গ্রামীণ কৃষিজীবী বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করতে সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যের অর্থকরী ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। ’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তিনি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন হাসান আহমেদ কিরণ। বিতর্কে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে।

এদিকে অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকার কর্তৃক সারের ৪ দফা দাম কমানোর যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ও ভর্তুকি প্রদানের প্রসঙ্গ তুলে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সারের ভর্তুকিতে ২৮ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে, এবং আগামী জুন পর্যন্ত আরো ৯ হাজার কোটি টাকা (মোট ২৮ হাজার কোটি) প্রয়োজন হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ও পরিবহণ ব্যয় বাড়ার ফলেই এ বিশাল অংকের ভর্তুকি লাগবে। এমনিতে আমাদের প্রতিবছর ৮-৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি লাগে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে, প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। আর জুন পর্যন্ত প্রয়োজন হবে আরো ৯ হাজার কোটি টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এদিকে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

মন্ত্রী বলেন, এত বিশাল অংকের ভর্তুকি কোথা থেকে আসবে এ বিষয়ে সরকার দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে। এত ভর্তুকি দিলে অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাবে। কিন্তু কৃষক বান্ধব ও কৃষক দরদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন কৃষকের কল্যাণে ও কৃষির উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে এ মুহূর্তে সারের দাম বাড়াবেন না। অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি শ্লথ হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারে ভর্তুকি দিয়ে যাবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button