Sub Lead Newsস্বাস্থ্য

৪৭ কোটি মানুষ কানে কম শোনা সমস্যায় ভোগেন

ডা. নূরুল হুদা

কান মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। বিশ্বে গড়ে ৪৭ কোটি মানুষ কানে কম শোনা সমস্যায় ভোগেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ৯০ মিলিয়নের বেশি মানুষ শোনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু। বাংলাদেশে প্রায় এক- তৃতীয়াংশ লোক কানে কম শোনার সমস্যায় ভোগেন।

ইয়ারফোন ব্যবহারের ফলে কানে শোনার সমস্যায় অনেক বেশি ভুগছেন যুবসমাজ। কানে শোঁ শোঁ আওয়াজ সমস্যা নিয়েও অনেকেই ডাক্তারের কাছে আসেন। সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করলে কম শোনার সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়।

কানের তিনটি ভাগ রয়েছে। বহিঃকর্ণ, মধ্যঃকর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ। বহিঃকর্ণ-শব্দ তরঙ্গ কানের পর্দাকে ভাইব্রেট করে। মধ্যঃকর্ণ-মধ্যকর্ণের হাড়কে ভাইব্রেট করে শব্দ তরঙ্গকে বাড়িয়ে দিয়ে অন্তঃকর্ণের তরলে পৌঁছায়। অন্তঃকর্ণ-কক্লিয়াতে অবস্থিত অর্গান অব কর্টির সংবেদী লোম কোষগুলো উদ্দীপ্ত হয়ে ইলেক্ট্রিকেল ইমপালস এ পরিণত হয়ে অডিটরি নার্ভের মাধ্যমে ব্রেইনে যায় এবং আমরা শুনি।

কানে কম শোনার অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বহিঃকর্ণের প্রদাহ যেমন কানে ময়লা জমে যাওয়া, কানে খৈল বা ওয়াক্সের সঙ্গে ধুলাবালি জমা, ভাইরাল ইনফেকশন ইত্যাদি। মধ্যকর্ণের সমস্যাগুলো হচ্ছে কান পাকা রোগ, পর্দায় ছিদ্র, মধ্যকর্ণে পানি/পুঁজ/রক্ত জমে যাওয়া, হাড়ের জোড়ায় সমস্যা, ফুট প্লেট শক্ত হয়ে যাওয়া এবং অন্তঃকর্ণের সমস্যা হচ্ছে জন্মগত বধিরতা, কানে যে কোনো টিউমার বৃদ্ধি পেতে থাকলে, কানের অভ্যন্তরে হিয়ারিং সেল নষ্ট হয়ে শ্রবণশক্তি হ্রাস।

শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে এরকম কোনো উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। অন্য মানুষের কথা ভালো করে বুঝতে পারছেন না, বিশেষ করে হইচই পূর্ণ জায়গায়। বারবার কথা পুনরাবৃত্তি করতে অনুরোধ করছেন। টেলিভিশনের ভলিউম বাড়িয়ে শুনতে হয়। মোবাইলে কথা শুনতে কষ্ট হয়? অন্যান্য মানুষের কথা শোনার জন্য গভীরভাবে মনোযোগ দেওয়া লাগে ও গভীর মনোযোগের কারণে কিছুক্ষণ পরে ক্লান্তি লেগে যায়। যে কোনো কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেলে সাধারণত এ উপসর্গগুলো দেখা দেয়। সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শে, সার্জারি বা হিয়ারিং এইড এর ব্যবহার কানের সমস্যা কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে।

৪৭ কোটি মানুষ কানে কম শোনা সমস্যায় ভোগেন

শিশুদের শ্রবণক্ষমতা স্ক্রিনিং করা আবশ্যক। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ন্যাশনাল হিয়ারিং স্ক্রিনিং অন্তর্ভুক্ত করা। হিয়ারিং ডিভাইস এবং থেরাপি সহজলভ্য করা। স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের প্রশিক্ষিত করা। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, অটোটক্সিক ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার। অযথা ম্যাচের কাটি, মুরগির পালক, মাথার ক্লিপ, কচুর ডাঁটা, কটনবাডর্স এগুলো দিয়ে কানে খোঁচাখুঁচি না করা।

কানে যাতে পানি না যায় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে। হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে কান পরিষ্কার না করানো। উচ্চ আওয়াজ এড়িয়ে চলা। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা। শব্দটি কত জোড়ে তা দেখুন-কানাকানি-৩০ ডিবি, কথোপকথন-৬০ ডিবি, ব্যস্ত ট্রাফিকে-৭০-৮৫ ডিবি, মোটরবাইক-৯০ ডিবি, হেডফোনের মাধ্যমে পূর্ণ ভলিউমে গান শোনা-১০০-১১০ ডিবি। হেডফোন ব্যবহার করার সময় নয়েজ ক্যানসেলিং ইয়ার ফোন ব্যবহার করুন। ৬০ শতাংশের ওপরে ভলিউম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

হিয়ারিং স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে শিশুদের কানে শোনার পরীক্ষা শিশুর জন্মের এক মাস সময়ের মধ্যে পরীক্ষা ও তিন মাস সময়ের মধ্যে রোগ নির্ণয় এবং ছয় মাসের মধ্যে চিকিৎসা করাতে হবে।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button